Skip to main content

শিলা: ১


শিলা প্রথমবার গ্রামে এসেছে। ওর নানুর বাড়ি। দুপুরের খা খা রোদে আম গাছের নিচে একটা মোটা বাঁশের বেঞ্চিতে বসে আছে। এটাকে নাকি মাচাল বলে। বেঞ্চ বানিয়েছে তো এত মোটা করে বানানোর কি দরকার ছিল। বেঞ্চটা আবার সরানোও যায় না। এর পা গুলো মাটির ভেতরে গেঁথে দেওয়া হয়েছে।
সকালে ও খেতেই পারে নি। ওকে পানি মেশানো ভাত খেতে দেওয়া হয়েছিল। ভাত আবার এভাবে খায়, কে জানত? ওর মা-বাবা ওটা খুব মজা করে খেল, যেন কতদিন খায়নি কিছু।
শিলা ওর মা-বাবার প্রথম সন্তান। হয়তোবা শেষও, সেটা ও জানে; কিন্তু কেন, সেটা জানে না।
ওর বাবা একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করে। আগে সাঁতারু ছিল। ওর বাবার চুলের চিপে পাকা-কাঁচা চুলের মিশ্রন। তবুও শক্ত-সুঠাম দেহগঠন। ওর বান্ধবীরা এখনও বলে; যখন শিলা ওর বাবার সাথে গতবছর এই স্কুলে ভর্তি হতে এসেছিল, ওর বাবাকে ওরা শিলার ভাই মনে করেছিল।
কাল রাতে ওর নানি পান চিবুতে চিবুতে বলছিল, মেয়েটা শহরে থেকে থেকে এক্কেবারে পুতুলের মত হয়ে গিয়েছে। 




হ্যা, মা সত্যিই পুতুলের মত সুন্দর। শিলা ওর মায়ের মত সুন্দর কাউকে এ পর্যন্ত দেখেনি। ও নিশ্চত যে ওর মা যদি প্রতিযোগীতায়য় অংশ নিত, তাহলে ওর মা মিস ইউনিভার্স হয়ে যেত।
বেগুন ক্ষেতের কাকতারুয়াটির দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে ও কি যেন ভাবছে।
এখন বাসায় থাকলে কী করতাম? একটু ফেইসবুকে ঢুঁ মারা যেত। এখন তো সেটাও হচ্ছে না। কাল রাতেই ফোনের ব্যটারি ডাউন হয়ে গিয়েছে। এখানে আবার চার্জ আপ করারও উপায় নেই। এই রাস্তা ধরে দূরে কোথায় নাকি ৫ টাকা দিয়ে সবকিছু চার্জ দেওয়া হয়। ওখানে যেতে পারলে হত। কিন্তু এই রাস্তায় কোনো গাড়ি দেখছি না। কী আজব ব্যপার, চোখের দৃষ্টির মধ্যে কোনো মানুষও নেই। গ্রামে দুপুরবেলা ঘুমানো বোধহয় কড়া নিয়ম। এই বাড়ির সবাইও এখন ঘুমাচ্ছে। এইখানে, এইরকম জায়গায় আব্বু কীভাবে পুরো উইকেন্ডটা কাটিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে!!!পড়ারও অনেক ক্ষতি হচ্ছে, সামনের মাস থেকেই স্কুলে টেষ্ট আর তারপরেই এস.এস.সি.। চিন্তায় আর বাঁচিনা!!! গ্রামের ছেলে-মেয়েদের কত আরাম, পড়া-শোনা কিছুই নাই। কাজ-কর্ম না থাকলে বোধহয় জীবনটা অনেক দীর্ঘ মনেহয়। এখনও বিকেল হতে অনেক দেরি। কী করা যায় এখন?
শিলা মাঁচাল থেকে উঠে মেটে পথটা ধরে হাঁটতে শুরু করে। উঁচু নিচু এরকম রাস্তায় ও আগে কখনোই হাঁটে নি। অজানা কিসের যেন আকর্ষনে ও হাঁটতেই থাকে...............

Comments

Popular posts from this blog

3D Printing ,যেটার উপর আমরা নির্ভরশীল হতে যাচ্ছি

একসময় হাতে বই লেখা হত, তারপর ফর্মায় ফেলে দ্রুত বই তৈরি করা হল,  তারপর ফটোকপি মেশিন সেটাকে আরো একটু দ্রুত করে দিল, আর এখনকার কথা,  তো সবাই জানি। কত কম সময়ের মধ্যে কত বিশাল পরিমান বই তৈরি করে ফেলা হচ্ছে।   আর এর মূলে কিন্তু রয়েছে আধুুনিক সব প্রিন্টার। এই সব প্রিন্টারের দ্রুততা,  নিখুততা আমাদের কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে।  তবে এর ভবিষ্যৎ কি? হাতে লেখার ভবিষ্যৎ ছিল,  ফর্মা, আবার ফর্মার ভবিষ্যৎ হল ফটোকপিয়ার।  যারা একটু ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করেন তারা নিশ্চয়, একটু আন্দাজ করতে পারছেন, 3D printer নামে একটা জিনিস বেশ কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছ,  তবে আম জনতার(mango people😁) মাঝে এটা খুব একটা হাইপ তুলতে পারেনি কারন,  বিষয়টা আমাদের প্রোয়োজনের সাথে যায় না তাছাড়া এর ব্যবহার কেবল ছোট ছোট খেলনা বানানোতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছিল,  বিগত সময়গুলোতে।  3D printer এ মূলত এমন কিছু প্রিন্ট করা সম্ভব যা ত্রিমাত্রিক হবে।  যেমন একটা কলম কিংবা সাইকেলের টায়ার কিংবা আপনার জুতাও৷ অর্থাৎ, ইন্টারনেট থেকে একটা জুতার 3D মডেল ডাউনলোড করলেন, আপনার ...

মন প্রোকৌশল, স্বপ্ন অনুপ্রেরনা আর জীবন গড়ার ফরমুলা

" মন প্রোকৌশল , স্বপ্ন অনুপ্রেরনা আর জীবন গড়ার ফরমুলা " বইটার নাম , শুনতে অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিকভাবে বড়। নাম শুনেই সহজেই বলে দেয়া যায় যে বইটা মূলত কিসের ওপর লেখা। হ্যা , মোটিভেশনাল ক্যাটাগরির বই এটা। মোটিভেশনাল ক্যাটাগরির হলেও সামান্য বিশেষত্য আছে এতে। একটু পরেই তা ব্যক্ষা করছি। বাংলা ভাষায় লেখা এরকম বই খুবই কম আছে , যদিও এখন এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।   এই বইটার যে দুইটা জিনিস আমাকে প্রথম দফাতেই চমৎকৃত করেছে সেটা হল , এর ফ্রন্ট কভারের ডিজাইনটা এবং এর ব্যক কভারে লেখা লেখকের সম্পর্কে …… এই বইটা অনেক ছোট ছোট অনুপ্রেরণা মূলক প্রবন্ধ দিয়ে ভর্তি যেগুলো কোনোভাবেই দুই পাতার বেশি নয়। খুবই ছোট ছোট প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধ গুলো অনুপ্রেরনা মূলক হলেও , আমার নিজের দৃষ্টি থেকে এই প্রবন্ধগুলো আমাদের প্রচলিত চিন্তাধারার পেছনে , প্রশ্নবোধক চিহ্ন জুরে দেয়৷ আমরা সচরাচর যেভাবে চিন্তা করি তাতে সামান্য পরিবর্তন আনতে সাহস জোগায়। বইটাকে কেন সম্পূর্ণভাবে মোটিভেশনাল ক্...

শিলা:৪

শিলা স্কুল মাঠের কোনায় ছোট পিলারে উপর বসে আছে। হাতে বীট লবন। আঙ্গুল দিয়ে সে একটু একটু করে খাচ্ছে। একটু আগেই সে একটা বাদামওয়ালার কাছে থেকে চেয়ে নিয়েছে লবনটুকু। স্কুলে সাধারনত বাদামওয়ালারা হেঁটে বেড়ায় না, এক জায়গায় বসে থাকে। কিন্তুু এই বাদামওয়ালা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন সে মাঠের আরেকপাশে। একটু পরেই এ পাশে চলে আসবে। তখন আরো খানিকটা লবন নেওয়া যাবে। হটাৎ হেডস্যার কোথাথেকে যেন চলে এলেন। উনি এসে বললেন, শিলা। আমি যান্ত্রিক গলায় বললাম, জ্বি। যেন রিভলবারে আগে থেকেই গুলি ভরা ছ িল, ট্রিগারে চাপ এবং গুলি বর্ষন। হেডস্যার বললেন, কি খাও? -লবন। হেডস্যার ময়লায় ঘিয়া রং হয়ে যাওয়া আলখাল্লা ধরনের একটা জিনিস পরেছেন। উনি হাত সবসময় পিছমোরা করে রাখছেন। হেডস্যার বললেন তুমি কি জান না, লবনের এক দানা জিহ্বায় ফেলা আর এক সিরিজ্ঞ বিষ শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া ব্যাতিক্রমধর্মী কিছু নয়। শুধু ফলাফল আগে আর পরে গ্রহন। -জ্বি না স্যার। -তুমি আমাকে স্যার ডাকছ কেন? -কেন স্যার কি ডাকব? -আহা! আমি তো সকল কবির গুরু। কবিগুরু। গুরুদেব ডাকতে পার। -গুরুদেব কেন স্যার? -শিলা তুমি কি আমাতে চিনতে পারছ না? আমি কবিগুর...