শিলা প্রথমবার গ্রামে এসেছে। ওর নানুর বাড়ি। দুপুরের খা খা রোদে আম গাছের নিচে একটা মোটা বাঁশের বেঞ্চিতে বসে আছে। এটাকে নাকি মাচাল বলে। বেঞ্চ বানিয়েছে তো এত মোটা করে বানানোর কি দরকার ছিল। বেঞ্চটা আবার সরানোও যায় না। এর পা গুলো মাটির ভেতরে গেঁথে দেওয়া হয়েছে।
সকালে ও খেতেই পারে নি। ওকে পানি মেশানো ভাত খেতে দেওয়া হয়েছিল। ভাত আবার এভাবে খায়, কে জানত? ওর মা-বাবা ওটা খুব মজা করে খেল, যেন কতদিন খায়নি কিছু।
শিলা ওর মা-বাবার প্রথম সন্তান। হয়তোবা শেষও, সেটা ও জানে; কিন্তু কেন, সেটা জানে না।
ওর বাবা একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করে। আগে সাঁতারু ছিল। ওর বাবার চুলের চিপে পাকা-কাঁচা চুলের মিশ্রন। তবুও শক্ত-সুঠাম দেহগঠন। ওর বান্ধবীরা এখনও বলে; যখন শিলা ওর বাবার সাথে গতবছর এই স্কুলে ভর্তি হতে এসেছিল, ওর বাবাকে ওরা শিলার ভাই মনে করেছিল।
কাল রাতে ওর নানি পান চিবুতে চিবুতে বলছিল, মেয়েটা শহরে থেকে থেকে এক্কেবারে পুতুলের মত হয়ে গিয়েছে।
হ্যা, মা সত্যিই পুতুলের মত সুন্দর। শিলা ওর মায়ের মত সুন্দর কাউকে এ পর্যন্ত দেখেনি। ও নিশ্চত যে ওর মা যদি প্রতিযোগীতায়য় অংশ নিত, তাহলে ওর মা মিস ইউনিভার্স হয়ে যেত।
বেগুন ক্ষেতের কাকতারুয়াটির দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে ও কি যেন ভাবছে।
এখন বাসায় থাকলে কী করতাম? একটু ফেইসবুকে ঢুঁ মারা যেত। এখন তো সেটাও হচ্ছে না। কাল রাতেই ফোনের ব্যটারি ডাউন হয়ে গিয়েছে। এখানে আবার চার্জ আপ করারও উপায় নেই। এই রাস্তা ধরে দূরে কোথায় নাকি ৫ টাকা দিয়ে সবকিছু চার্জ দেওয়া হয়। ওখানে যেতে পারলে হত। কিন্তু এই রাস্তায় কোনো গাড়ি দেখছি না। কী আজব ব্যপার, চোখের দৃষ্টির মধ্যে কোনো মানুষও নেই। গ্রামে দুপুরবেলা ঘুমানো বোধহয় কড়া নিয়ম। এই বাড়ির সবাইও এখন ঘুমাচ্ছে। এইখানে, এইরকম জায়গায় আব্বু কীভাবে পুরো উইকেন্ডটা কাটিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে!!!পড়ারও অনেক ক্ষতি হচ্ছে, সামনের মাস থেকেই স্কুলে টেষ্ট আর তারপরেই এস.এস.সি.। চিন্তায় আর বাঁচিনা!!! গ্রামের ছেলে-মেয়েদের কত আরাম, পড়া-শোনা কিছুই নাই। কাজ-কর্ম না থাকলে বোধহয় জীবনটা অনেক দীর্ঘ মনেহয়। এখনও বিকেল হতে অনেক দেরি। কী করা যায় এখন?
শিলা মাঁচাল থেকে উঠে মেটে পথটা ধরে হাঁটতে শুরু করে। উঁচু নিচু এরকম রাস্তায় ও আগে কখনোই হাঁটে নি। অজানা কিসের যেন আকর্ষনে ও হাঁটতেই থাকে...............
Comments
Post a Comment