Skip to main content

শিলা:৪

শিলা স্কুল মাঠের কোনায় ছোট পিলারে উপর বসে আছে। হাতে বীট লবন। আঙ্গুল দিয়ে সে একটু একটু করে খাচ্ছে। একটু আগেই সে একটা বাদামওয়ালার কাছে থেকে চেয়ে নিয়েছে লবনটুকু। স্কুলে সাধারনত বাদামওয়ালারা হেঁটে বেড়ায় না, এক জায়গায় বসে থাকে। কিন্তুু এই বাদামওয়ালা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন সে মাঠের আরেকপাশে। একটু পরেই এ পাশে চলে আসবে। তখন আরো খানিকটা লবন নেওয়া যাবে।

হটাৎ হেডস্যার কোথাথেকে যেন চলে এলেন।
উনি এসে বললেন, শিলা।
আমি যান্ত্রিক গলায় বললাম, জ্বি। যেন রিভলবারে আগে থেকেই গুলি ভরা ছিল, ট্রিগারে চাপ এবং গুলি বর্ষন।
হেডস্যার বললেন, কি খাও?
-লবন।
হেডস্যার ময়লায় ঘিয়া রং হয়ে যাওয়া আলখাল্লা ধরনের একটা জিনিস পরেছেন। উনি হাত সবসময় পিছমোরা করে রাখছেন।
হেডস্যার বললেন তুমি কি জান না, লবনের এক দানা জিহ্বায় ফেলা আর এক সিরিজ্ঞ বিষ শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া ব্যাতিক্রমধর্মী কিছু নয়। শুধু ফলাফল আগে আর পরে গ্রহন।
-জ্বি না স্যার।
-তুমি আমাকে স্যার ডাকছ কেন?
-কেন স্যার কি ডাকব?
-আহা! আমি তো সকল কবির গুরু। কবিগুরু। গুরুদেব ডাকতে পার।
-গুরুদেব কেন স্যার?
-শিলা তুমি কি আমাতে চিনতে পারছ না? আমি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
-সে কি গুরুদেব আপনার দাড়ি কি?
কবিগুরু তৎক্ষণাৎ তার রুচির পরিবর্তন ঘটিয়ে আমাকে কষে দিলেন এক চড়। বাকি পৃথীবি আমার কাছে অন্ধকার হয়ে গেল।

ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমাদের গাড়ি কোনো এক ব্রিজের উপর দিয়ে চলছে। সামনের গাড়িগুলো দেখা যাচ্ছে না, দেখা যাচ্ছে শুধু গাড়ির মাথা। সন্ধ্যা পর পর। আকাশ নিজেকে নিলাট মলাটে আবৃত করে নিচ্ছে।
বাবা ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে গভীর মনোযোগে টাইপ করছেন। ইফতি সাহেব গাড়ি চালাতে চালাতে ভেতরের হলুদ টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে দিলেন। এই আলোতে সবাইকে বিচিত্র লাগছে। আহা! আমার আম্মুটা আমার কোলে মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে গেছে। গাড়ির জার্নি মার সহ্য হয় না। আজ মা মেয়ে দুজনেই শাড়ি পরেছি। আমারটা সবুজ মায়েরটা নীল। এখন মনেহচ্ছে আমি আম্মুর মেয়ে না, আম্মুই আমার মেয়ে। লক্ষী মেয়ে মায়ের কোলে টুপ করে ঘুমিয়ে গেছে। আমরা কোথায় যেন যাচ্ছিলাম? মৌলভিবাজার। নিশাত ভাইয়ার বিয়ে। এই নিশাত ভাইয়টাও হটাৎ করে কত বড় হয়ে গেল, এখন বিয়ে করছে।
বিয়ের মত ভয়ঙ্কর ধরনের অনুষ্ঠানে যাবার আগে শিলার খুব টেনশন হয়। টেনশনে দু চোখ ঘুমে জরিয়ে আসে। শিলা ঘুমিয়ে যায়। ঘুম হয় অতি সল্প সময়, কিন্তুু তার কাছে মনেহয় অনন্তুকাল ঘুমিয়ে সে জাগ্রত হল। ঘুম থেকে ওঠার পর ভালো লাগে না। হার্ট দপদপ করে, গলার কাছে টক ঢেঁকুর ওঠে। কিন্তুু, আজ ভাল লাগছে।
ঘুমিয়ে কি যেন স্বপ্ন দেখলাম! মনে পরছে না। তবে আজ মনের ভেতর খারাপ লাগা ভাবটা নাই। আলসে-আরাম লাগছে। আবার ঘুমিয়ে পরলে কেমন হয়! হয়ত স্বপ্নের বাকি অংশটাও দেখা যাবে। বাকি অংশ দেখলে প্রথমটুকুও মনে পরে যাবে। আকাশ আরও নীল হয়ে এসেছে। আকাশের নীল আর সাদা অংশ একই সাথে দেখা যাচ্ছে। যেন চিরজীবনই এই গাড়ি চলুক আর আমি চিরজীবনই নীল-সাদা আকাশ দেখি। কি সুন্দর!
হটাৎ ইফতি সাহেব ভয়ঙ্কর অসহায় চিৎকার দেন। আমার চোখ সামনের রাস্তায় স্থির হয়ে যায়....

Comments

Popular posts from this blog

3D Printing ,যেটার উপর আমরা নির্ভরশীল হতে যাচ্ছি

একসময় হাতে বই লেখা হত, তারপর ফর্মায় ফেলে দ্রুত বই তৈরি করা হল,  তারপর ফটোকপি মেশিন সেটাকে আরো একটু দ্রুত করে দিল, আর এখনকার কথা,  তো সবাই জানি। কত কম সময়ের মধ্যে কত বিশাল পরিমান বই তৈরি করে ফেলা হচ্ছে।   আর এর মূলে কিন্তু রয়েছে আধুুনিক সব প্রিন্টার। এই সব প্রিন্টারের দ্রুততা,  নিখুততা আমাদের কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে।  তবে এর ভবিষ্যৎ কি? হাতে লেখার ভবিষ্যৎ ছিল,  ফর্মা, আবার ফর্মার ভবিষ্যৎ হল ফটোকপিয়ার।  যারা একটু ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করেন তারা নিশ্চয়, একটু আন্দাজ করতে পারছেন, 3D printer নামে একটা জিনিস বেশ কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছ,  তবে আম জনতার(mango people😁) মাঝে এটা খুব একটা হাইপ তুলতে পারেনি কারন,  বিষয়টা আমাদের প্রোয়োজনের সাথে যায় না তাছাড়া এর ব্যবহার কেবল ছোট ছোট খেলনা বানানোতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছিল,  বিগত সময়গুলোতে।  3D printer এ মূলত এমন কিছু প্রিন্ট করা সম্ভব যা ত্রিমাত্রিক হবে।  যেমন একটা কলম কিংবা সাইকেলের টায়ার কিংবা আপনার জুতাও৷ অর্থাৎ, ইন্টারনেট থেকে একটা জুতার 3D মডেল ডাউনলোড করলেন, আপনার ...

মন প্রোকৌশল, স্বপ্ন অনুপ্রেরনা আর জীবন গড়ার ফরমুলা

" মন প্রোকৌশল , স্বপ্ন অনুপ্রেরনা আর জীবন গড়ার ফরমুলা " বইটার নাম , শুনতে অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিকভাবে বড়। নাম শুনেই সহজেই বলে দেয়া যায় যে বইটা মূলত কিসের ওপর লেখা। হ্যা , মোটিভেশনাল ক্যাটাগরির বই এটা। মোটিভেশনাল ক্যাটাগরির হলেও সামান্য বিশেষত্য আছে এতে। একটু পরেই তা ব্যক্ষা করছি। বাংলা ভাষায় লেখা এরকম বই খুবই কম আছে , যদিও এখন এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।   এই বইটার যে দুইটা জিনিস আমাকে প্রথম দফাতেই চমৎকৃত করেছে সেটা হল , এর ফ্রন্ট কভারের ডিজাইনটা এবং এর ব্যক কভারে লেখা লেখকের সম্পর্কে …… এই বইটা অনেক ছোট ছোট অনুপ্রেরণা মূলক প্রবন্ধ দিয়ে ভর্তি যেগুলো কোনোভাবেই দুই পাতার বেশি নয়। খুবই ছোট ছোট প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধ গুলো অনুপ্রেরনা মূলক হলেও , আমার নিজের দৃষ্টি থেকে এই প্রবন্ধগুলো আমাদের প্রচলিত চিন্তাধারার পেছনে , প্রশ্নবোধক চিহ্ন জুরে দেয়৷ আমরা সচরাচর যেভাবে চিন্তা করি তাতে সামান্য পরিবর্তন আনতে সাহস জোগায়। বইটাকে কেন সম্পূর্ণভাবে মোটিভেশনাল ক্...

শরবতে বাজিমাত

শরবতে বাজিমাত, মুনির হাসানের লেখা এই বইটার নামটা ভারি অদ্ভুদ বটে। ভাবছেন কি বিষয়ের উপর লেখা বই, শরবত বানানোর কলাকৌশল?? নাহ্, এটা মূলত ব্যবসা রিলেটেড বই। মুনির হাসান, যার হাতে সূচনা হয়েছে, "চাকরি খুজব না, চাকরি দেব" প্লাটফর্মের। এই বইটাও উদ্দোক্তাদের আরেকটু উদ্দোক্তা হবার পথে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরনা দিয়েছেন… তবে একটু ভিন্নভাবে। বইটাতে রিচার্ড, অ্যডাম এবং জন নামের তিন বন্ধুর গল্প বলা হয়েছে যারা UK তে শরবতের ব্যবসা শুরু করে ইনোসেন্ট নামে। এই তিন বন্ধুই একসাথে কেমব্রিজ থেকে পাশ করে বের হয় এবং যথারীতি চাকরিতেও ঢুকে যায়, কিন্তু কেমব্রিজে থাকা অবস্থাতেই তাদের মাথায় ব্যবসার চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তারা চাকরি ছেড়ে ১৯৯৮ সালে ৫০০ পাউন্ড সম্ভল নিয়ে "ইনোসেন্ট" নামে একটা স্মুদির(যাকে খাস বাংলায় শরবত বলা চলে) কোম্পানি শুরু করেন যেটি কিনা আজ ইউরোপ জুরে প্রতিদিন তিনলাখ বোতল বিক্রি হয়। তিন বন্ধুর এই ব্যবসার গল্পকে কেন্দ্র করেই লেখক তার নিজের দৃষ্টিকোন থেকে বইটি লিখেছেন। তাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে বর্ননা করে, লেখক উপদেশ দিয়েছেন একজন...